আমার একজন পরিচিত ডাক্তার আছেন। বাংলাদেশের হাতে গোনা দুই তিনজনের মদ্ধ্যে অন্যতম ব্রেইন এন্ড নিউরো সার্জন। শত শত মানুষের ব্রেইন অপারেশন করেন নিখুঁত দক্ষতায়। কিন্ত তাঁর বিশ বছরের সবচেয়ে আদরের সন্তানটি মারাগেছে ব্রেইন হেমারেজ হয়ে, বিনা চিকিৎসায়। ওনার ভাগ্যে জোটেনি প্রাণপ্রিয় সন্তানের চিকিৎসা করার। ঢাকা শহরের মধ্যেই আপনি হাজারো মানুষ খুঁজে পাবেন যারা পকেট ভর্তি/ব্যাংক ফুলে ওঠা টাকা থাকার পরেও রাতে ঘুমায় না খেয়ে। বাসায় তাদের জন্য রান্না হয় না; স্ত্রীরা ব্যস্ত সোস্যাল ওয়ার্ক আর ফুটানি নিয়ে।
গুনবতী বউ পাওয়ার জন্য ভাল পরিবার দেখে বিয়ে করে উশৃঙ্খল বউয়ের হাতে নাজেহাল হয় শতকরা সাতচল্লিশ ভাগ পুরুষ। স্বচ্ছলতার আশায় শ্বসুর বাড়ির যৌতুক বা কৃপা নেয়া শতকরা সাতাশি ভাগ পুরুষ, স্ত্রী এবং তার পরিবার দ্বারা নিগৃহীত, স্বচ্ছলতার আনন্দ মরিচিকা হয়ে যায় নিত্য গঞ্জনায়। সবচেয়ে আশ্চর্য উপাত্ত হলো সুখের আশায় দরিদ্র এবং অপেক্ষাকৃত গরীব ঘরে বিয়ে করা শতকরা তেপ্পান্নভাগ পুরুষ, স্ত্রী দ্বারা সরাসরি শারিরীক/মানসিক নির্যাতনের স্বীকার। (সূত্র: জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ ঢা.বি)। যাদের আমরা সফল বলি এরকম শতকরা নব্বই ভাগ মানুষের শেষ জীবন কাটে অপূর্ণতায়, পুত্র-কন্যাদের চরম অবহেলায়।
কোথাও তিন ঘন্টার জন্য যেতে গেলেও চল্লিশবার এটা ওটা চিন্তা করা, রিস্ক এনালাইসিস, ম্যানেজমেন্ট এবং রিস্ক মিটিগেশনের চিন্তা আনেকেরই মজ্জাগত অভ্যাস। এই প্রচেষ্টাপূর্ন জীবনটায় ডিলেমা আর প্রসেসের মদ্ধেই আটকে গেছি সবাই। ছাত্রজীবনে একটা ভাল চাকুরী, চাকুরির শুরুতে একটা ভাল সঞ্চয়; পরবর্তীতে গাড়ী, বাড়ী, পুত্র-কন্যাদের ভবিষ্যৎ, একের পর এক, চাহিদার কি শেষ আছে?
শেষ কবে নিজের মনে এক ঘন্টা গান শুনেছেন? নদীর ধারে একটা বিকেল সূর্যাস্ত দেখেছেন? নিজের পছন্দে একটা বৃষ্টিতে ভিজেছেন?জানি কমবেশি সবাই বড় বেশিই গৃহপালিত হয়ে গেছি।
কতদিন খেজুরের রসে মুখ ডুবান না, হিসেব আছে কি? পাখির কাকলি উপভোগ করেন না কত দিন, ফুলের সৌরভ আপনাকে কতদিন মুগ্ধ করে না? অফিস-বাসা হয়ে গেছে প্রাত্যাহিক; সংসার নামক কাঁধের জোয়াল, ক্যারিয়ার, ভবিষ্যত, সঞ্চয় আর চিন্তা সহ বড় বেশি সব আজাইরা দুশ্চিন্তা ! বড়ই একঘেয়ে, অসম্ভব মেকি!
নিজের মনের খুশির জন্য মানুষের উপকার, প্রকৃতির সেবা করেন না কতদিন? গ্রামের বাড়ির পাশের যে দুস্থ বিধবা যা আপনাকে ছোটবেলায় অনেক আদর করত তাঁর খোঁজ নেন না কতদিন? জানি আমার মত আপনাদের অনেকেরই প্রশ্নের জবাব শুন্যতায় ভরা। অনেক ভেবে দেখলাম শুধুই হিসেবী না হয়ে ডোন্টকেয়ার হয়ে যাব। কি হলো বা কি হবে, কে কি ভাববে, এসব চিন্তা না করে- মনের আনন্দের জন্য, জীবনটা উপভোগ করেই মরব; আমি না থাকলেও দুনিয়া যেহেতু চলবেই।
আসুন না আমাদের সাথে!!!